“তোমায় দেখে আমার মেয়ের কথা মনে পড়ে যাচ্ছে।”
ভদ্রলোক বলেন কী? অনুসন্ধিৎসু হলাম — “আপনার মেয়েরও বুঝি আমার মতো পাতলা গোঁফ-দাড়ি?”
ভদ্রলোক হেসে ফেললেন — “না, না। আমি গাইতে শুরু করলেই ও আমার দিকে এভাবে মাথা হেলিয়ে দিত। যতক্ষণ না শেষ হত চোখের পলক পড়ত না তার।” তারপর নিজেই যোগ করলেন — “বহুদিন হয়ে গেল আর আমার গান শোনে না সে। এখন আমেরিকায় আছে।”
শেষে গলাটা যেন সামান্য ভারী হয়ে এল। কুয়াশা কাটাতে তাই আমি বললাম — “আপনাকে দেখে আমার স্ত্রীর কথা মনে পড়ে যাচ্ছে।”
ভদ্রলোক সুযোগটা ছাড়লেন না — “কেন তোমার স্ত্রীর বুঝি আমার মতো চওড়া টাক?” আমায় কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই বললেন — “বুঝেছি। সে ভালো গান গায়।”
আমি ঘাড় নেড়ে খোলসা করলাম — “শেষবার যখন এমন একটা বোম্বার্ডিয়ার জেটে উঠেছিলাম সে আমার পাশে ছিল। একটা মজার ঘটনা ঘটেছিল।”
ভদ্রলোক ইঞ্জিনের আওয়াজ এড়াতে আমার দিকে সামান্য সরে এলেন।
আমরা মধুচন্দ্রিমায় যাব ওয়াইনাড়। প্রথম অংশটা ব্যাঙ্গালোর থেকে কালিকট বিমানযাত্রা। যথাসময়ে আমরা এমনই একটা ছত্রিশ আসনের বোম্বার্ডিয়ার জেটে চড়ে বসলাম। কিন্তু প্লেন আর ছাড়ে না। কী ব্যাপার? নির্ধারিত সময়ের প্রায় মিনিট কুড়ি পরে দেখা গেল পাইলট এসে উঠলেন ককপিটে। লিপি সভয়ে জিজ্ঞাসা করল — “লোকটা একটু একটু টলছিল না?” বিমান সংস্থার মালিক বিয়ার ব্যারন বলে পিয়াক্কড় পাইলট হবে এমনটা ভাবা বোধ হয় বাড়াবাড়ি। তাছাড়া উড়ানের চব্বিশ ঘণ্টা (নাকি আটচল্লিশ) আগে থেকে দারু-টারু বন্ধ থাকে পাইলটদের জন্যে। লিপিকে এসব বলে আশ্বাস দিচ্ছি এমন সময় সেই পাইলট আসল চিত্তিরটা করে বসলেন। ঘোষণা করলেন — “ব্যাঙ্গালোর থেকে পুণের এই ফ্লাইটে আপনাদের স্বাগতম। আমি পাইলট অমুকচন্দ্র আজ আপনাদের ইত্যাদি প্রভৃতি।” এবার আমারই সন্দেহ হল। ব্যাটা সত্যিই মাল টেনে ওঠেনি তো? কাছে দাঁড়িয়ে থাকা এয়ারহোস্টেসকে ডাকলাম — “এই প্লেন কালিকট যাবে তো?” তিনি বাঁকা হেসে বললেন — “আপনার টিকিট তো তাই বলছে।” আমি পকেট থেকে টিকিটটা বের করে তাঁর হাতে দিয়ে বললাম — “এটা পাইলটকে দেখিয়ে আসুন। কারণ ভুল করে পুণে নিয়ে চলে গেলে তো মুশকিল।” তিনি আমায় কিছু বোঝানোর আগেই সামনের সিট থেকে আরেক চেটা উঠে দাঁড়ালেন — “আমি পুণে যেতে চাই না। কালিকটই যাব।” এবং তারপর আরও একজন। সবাইকে বুঝিয়ে-সুঝিয়ে বসাতে বসাতে বিমানসেবিকাদের জেরবার অবস্থা!
ভদ্রলোক মুচকি হাসতে শুরু করেছেন — “সেবার আমি চেন্নাই থেকে ব্যাঙ্গালোর আসার সময় কী হয়েছিল বলি তাহলে। ট্রেনে ফিরছিলাম…”
এক অপরিচিত অসমবয়সী তামিল বন্ধুর পাশে বসে ব্যাঙ্গালোর থেকে চেন্নাইয়ের পৌনে এক ঘণ্টার বিমানযাত্রা এবার এমনই সব এ্যানেকডোটে ভরা রইল।
ওমনিস্কোপ
Homepage of Rohon Kuddus
Leave a Reply