বাংলা আর কেরালার কী মিল, কী মিল। মানে ফুটবল, মাছ-ভাত, সিপিয়েম তো ছিলই। আজ ডিনারে গিয়ে সঙ্গের ছানাটাকে বলি, “কী রে ভাই, তোদের নতুন বছর তো আসতে চলল। সেদিন কী খাওয়াচ্ছিস?” সে অম্লানবদনে বলে, “নিউ ইয়ার! সে তো নভেম্বরে চলে গেছে।” আমি আশ্চর্য হয়ে বলি, “বলিস কী রে! তোদের বিশু তো আমাদের নববর্ষের একদিন আগে-পরে পড়ে।” সে ততোধিক আশ্চর্য হয়ে বলে, “বিশু আমাদের নববর্ষ নাকি!” তারপর পকেট থেকে ফোন বের করে ফটাফট গুগল করে বলে, “হ্যাঁ হ্যাঁ, ঠিক।” পকেটে ফোন ঢুকিয়ে মাক্কালী টাইপ জিভ বের করে বলে, “এই তো চোদ্দো তারিখ।” আমি চোখ পাকিয়ে বললাম, “তুই তো মাল্লুদের কলঙ্ক রে! যাক গে, কত সাল চলছে তোদের ক্যালেন্ডারে?” সে ঘাড় নাড়ে, জানে না। “আরে বাবা! অন্তত এটা বল, তোদের ক্যালেন্ডারকে কী বলে? যেমন ইংরাজিতে এ ডি, আরবিতে হিজরি (আমাদেরটা বঙ্গাব্দ বলে না? নাকি শকাব্দ?); তেমন তোদের কী বলে?” সেটাও জানে না। এবার হতাশ হয়ে বলি, “অন্তত মাসগুলোর নাম জানিস?” সে এবার দুদিকে মাথা নাড়িয়ে (যেটা কিনা মালায়ালি হ্যাঁ) শুরু করে — “চিংগম, কান্নি, তুলাম, বৃশ্চিকাম… এরকম এগারোটা মাস আছে।” আমি হাল ছেড়ে দিই — “ওরে পামর! এগারোটা নয়, বারোটা। দুনিয়ায় এই প্রথম শুনলাম কোনও ক্যালেন্ডারে এগারো মাস হয়।” সে মেনে নিল, “বারোটা মাস। কিন্তু ওই চিংগম…” এবার সন্দেহ হল — “দাঁড়া, দাঁড়া। এর আগে তুলাম, বৃশ্চিকাম বলছিলি? ওগুলো তো রাশি রে হতভাগা! তা চিংগাম মানে কী? সিংহ?” সে একগাল হেসে মাথা নাড়ল। আমি আতঙ্কিত — “শুনে সিংঘমের প্রিকুয়েল মনে হচ্ছিল। তা এই যে রাশিগুলো মাস হিসাবে চালাতে চাইছিস, আমাকে কি গাধা ভেবেছিস?” যাই হোক, ততক্ষণে মুখের সামনে খাবার এসে হাজির।
খেতে খেতে আমার কৌতূহল হল। আচ্ছা, সত্যিই তো, ওদের ক্যালেন্ডারকে কী বলে? আর মাসগুলোরই বা কী নাম? খেয়েদেয়ে আমরা আবার গুগল নিয়ে পড়লাম। মালায়ালাম ক্যালেন্ডারের নাম কোল্লা বর্ষম বা কোল্লাম। আর মাসের নাম? ছোঁড়া ঠিকই বলছিল — ওই চুইংগাম ইত্যাদি। বারোটা রাশির নামে বারোটা মাসের নাম। তবে হ্যাঁ, বারোটা মাসের নাম ঠিকঠাক সে বলতে পারল না। আমি বিল মেটাতে মেটাতে বললাম, “দুঃখ পাস না। বাংলা বারোটা মাসের নাম আমিও পরপর বলতে পারব না।” তারপর দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললাম, “মা চেষ্টা করেছিল ক’দিন শেখানোর। সব প্রচেষ্টাই বিফলে যায়।”
ও হ্যাঁ, যেটা নিয়ে তর্ক এখনও চলছে, সেটা হল মালায়ালাম ক্যালেন্ডারে কোন সাল আসতে চলেছে। ওদের ক্যালেন্ডার শুরু হয়েছে ৮২৫ খ্রিষ্টাব্দে। কিন্তু এটা আর গুগল করতে ইচ্ছা করছিল না। আমরা অঙ্ক-টঙ্ক কষে প্রায় একশ বছরের ব্যবধানে দাঁড়িয়ে। সুখের কথা, আমি একেবারে ঠিক বছরটা না বলতেও পারলেও সময়ের থেকে এগিয়ে আছি নিশ্চিত।
ওমনিস্কোপ
Homepage of Rohon Kuddus
Leave a Reply