ইনোসেন্স ব্যাপারটা একেবারে শেষ হয়ে যায়নি এখনও। ফেবুতে আমার বন্ধুতালিকার একজন (বোধ হয় এখনও টিনবেলা পেরোননি) আমায় একটু আগে মেসেজ করলেন, “দাদা, আমায় এক কপি অপ্রাকৃত দিয়ে যেতে পারবে?” সৃষ্টিসুখ থেকে প্রকাশিত বইগুলো সবাই-ই যে আমাজন বা কলেজ স্ট্রিট থেকে কেনেন, তা নয়। অনেকেই মেল করে এ্যাড্রেস পাঠান তাঁদের কুরিয়ার করার জন্যে। কিন্তু এই ভদ্রলোক আমাকেই ক্যারিয়ার হতে বলছেন। কিন্তু হতেও পারে আমি ভুল বুঝেছি। তাই জিজ্ঞাসা করলাম, “কোথায় দিয়ে আসব?” উনি উত্তর দিলেন, “আমার বাড়িতে।” নিশ্চিত হলাম, আমাকেই দিয়ে আসতে হবে। তা পর্বতের মহম্মদ সমীপে যাত্রা নতুন কিছু নয়। (এই তুলনাটা এই যুগে খুব ভয়ঙ্কর যদিও। আমায় পর্বতের সঙ্গে তুলনা করলে, দুনিয়ার সকল পর্বতকুল ধর্মঘট করবে। আর উল্লেখ্য ভদ্রলোককে মহম্মদ বললে, ওয়েল…) মানে, ইয়ে, বলতে চাইছিলাম পাঠক বইয়ের কাছে আসবে না তো কী, বই-ই না হয় যাবে পাঠকের কাছে। কিন্তু ছেলেটা হয়তো নেহাতই আমার সঙ্গে মশকরা করছে। তাই বাজিয়ে দেখতে ছোট্ট করে বললাম, “আচ্ছা।” ওদিকে আর উত্তর নেই মিনিট দশেক। হয়তো হিসি করতে গিয়েছিল। বা সেও হয়তো আমায় মাপছিল। একটু পরে উত্তর এল, “কিন্তু তুমি তো আমার বাড়ি চেনো না।”
এবার আর থাকতে পারলাম না। বেচারা নেহাতই নিরীহভাবেই কথাবার্তা বলছে। এবং কলকাতায় থাকলে তার বাড়ি না যেতে পারলেও, রবিবারের এই অবেলায় তার বাড়ির কাছাকাছি কোনও এলাকায় গিয়ে বইটা হস্তান্তর করে আসতাম। কিন্তু নেহাতই ব্যাঙ্গালোরে থাকি। তাই তাকে একটা হাসিমুখ এমোট-আইকন পাঠালাম। বললাম, বই দিয়ে আসা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। তবে সে কলেজ স্ট্রিট বা আমাজন বা কুরিয়ারে বইটা কিনতে পারে। সেক্ষেত্রে শেষ দুটো অপশানে কুরিয়ারের জন্যে আলাদা পয়সা লাগবে। পাঠক জানালেন, “খেয়ে এসে জানাব।” তা তিনি খেয়ে আসুন। আমি এই বিরতিতে স্ট্যাটাসটা লিখে রাখি। সৃষ্টিসুখ যখন খুব বড়ো প্রকাশনা হয়ে যাবে, তখন এই সৃষ্টিসুখ নিয়ে লেখার সময় কোনও আলোচক এই ঘটনাটা একটা ট্রিভিয়া হিসাবে ব্যবহার করতে পারেন। ২০১৫-তেও আমাদের পাঠক কতটা ইনোসেন্ট ছিলেন (ভালো অর্থে অবশ্যই), তদানীন্তন প্রকাশক কতটা বিনয়ী ছিলেন, পাঠক চাইলে বাড়ি বয়ে বই দিয়ে আসার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন ইত্যাদি ইত্যাদি…
দুঃখের বিষয়, ক মাস পরে এই আপডেটটা খুঁজেপেতে আমাকেও বেশ কয়েক ফুট লম্বা স্ক্রল করতে হবে।
[ফেসবুক থেকে ক্রস-পোস্ট] 1
Leave a Reply