কলকাতা বইমেলা ২০১৪-তে নানা বিচিত্র অভিজ্ঞতা হয়েছিল। তার মধ্যে একটা এইরকম।
এক ভদ্রলোক কোনও বন্ধুর মুখে সৃষ্টিসুখ-এর নাম শুনে আমাদের স্টলে এসে ৩-৪টে বই কিনলেন। তারপর আরও কয়েকটা বই উলটে-পালটে দেখতে লাগলেন। প্রশংসার সুরে মাথা নেড়ে বললেন — “সুন্দর করেছেন। দারুণ সব মলাট।” তারপর দেখতে লাগলেন মলাট কার করা। বেশ কয়েকটা প্রচ্ছদে আমার নাম দেখে জিজ্ঞাসা করলেন — “আপনি তার মানে মূলত আর্টিস্ট, তা পাবলিশিং লাইনে এলেন কেন? ছবি এঁকে-টেকে সেরকম চলে না, না?” আমায় ‘আর্টিস্ট’ বলায় চোখ-নাক-মুখ ছাপিয়ে সোডার মত ভসভসিয়ে হাসি বের হতে চাইল। আমাদের উলটো দিকেই এন ই পাবলিশার্স বই সাজিয়ে বসেছে। অধিকাংশ প্রচ্ছদই সৌরীশ-এর (সৌরীশ মিত্র) করা। আমাদের নিজেদের বইয়েও শমিতদার (শমিত রায়) করা প্রচ্ছদ আছে। এদের মাঝে দাঁড়িয়ে কেউ যদি আমায় আর্টিস্ট বলে, তাহলে আমাদের মুখ্যমন্ত্রীও আর্টিস্ট। যাই হোক, আমি ওনার ভুল ভাঙাতে একটা পরিচিত গল্প বললাম।
একবার রাজকোষ শূন্য। রাজা থেকে শুরু করে মন্ত্রী-আমলা সবাইকে ব্যয় সংকোচনের ওপর নজর দিতে বলেছেন অর্থমন্ত্রী। একদিন সভা বসেছে। প্রধানমন্ত্রী অনুপস্থিত। বেশ কিছুক্ষণ পর হাঁপাতে হাঁপাতে তিনি এসে হাজির। কী ব্যাপার? প্রধানমন্ত্রী লম্বা একটা শ্বাস নিয়ে উজ্জ্বল মুখে বললেন — “আজ তিন টাকা বাঁচিয়েছি।” কীরকম? “আমি আজ বাসে না চড়ে, বাসের পেছনে দৌড়তে দৌড়তে রাজসভায় এসেছি।” অর্থমন্ত্রী গম্ভীর মুখে বললেন — “ভালো প্রচেষ্টা। কিন্তু ট্যাক্সির পেছনে দৌড়ে এলে অন্তত দশগুণ বেশি বাঁচাতে পারতেন।”
গল্পটা শেষ করে আমি ভদ্রলোকের হাতে এক কপি ‘আঠারো পর্ব’ তুলে দিলাম — “এই প্রচ্ছদটাতে আমি হাজার দু-আড়াই বাঁচিয়েছিলাম।” এখনও কাউকে কাউকে জিজ্ঞাসা করি — “ভাই, একটা প্রচ্ছদ করতে কত নেবে?” তারপর অঙ্কটা শুনে নিয়ে নিজেই করে নিই কাজটা। আমার শিল্পী সত্তার ওপর এহেন আলোকপাতের পর ভদ্রলোক খুশি হয়ে আঠারো পর্ব বইটা কিনে নিলেন।
আপনারাও কেউ আঠারো পর্ব-র প্রচ্ছদ হাতে নিয়ে দেখতে চাইলে এখানে পাবেন — http://www.amazon.in/Atharo-Parbo-Shamim-Ahmed/dp/1625900341/
2
Leave a Reply