জাস্ট ট্রেনে উঠলাম। সারাদিন আউটলেটে বসে অর্ডারি বই ঠিকানা লিখে প্যাকেটে ঢোকালাম। বিশ্বজিৎ প্যাকেটের মুখ বন্ধ করল। মাঝে সে পোস্ট অফিসে যাওয়ার পরে এক ভদ্রলোক এলেন। আমার তখন অচেনা রান্নাঘরে ঢোকার হাল। দু’মিনিট ছাড়া ছাড়া বিশ্বজিৎকে ফোন করি — বিলবই কই? দারুণ আল কিতাব কই? রসেবশে কই? যাক গে, সেই ভদ্রলোক আমার হাল দেখে ফেলুদা/ব্যোমকেশও কিনে নিলেন। ঈশানীদির হার্টবিট আর অভীকের তিন এক্কে তিন নিতে এসেছিলেন যদিও। আমেরিকায় থাকেন। রোমাঞ্চ হল। কলকাতায় এসেই এই গলিঘুঁজির মধ্যে খুঁজে খুঁজে আমাদের বই কিনতে এসেছেন। উনি অবশ্য আগ বাড়িয়ে বলেননি, আমারই জানার সাধ হয়েছিল। তারপর একজন এলেন প-ফ কিনতে। তিনি যাওয়ার পর এলেন রসেবশের প্রশান্তদা, এমনিই দেখা করতে এসেছিলেন আমি আসব শুনে। মনে পড়ল, আগের বইমেলাতেই ভদ্রলোকের সঙ্গে ঠাঁই-ঠাঁই হয়েছিল। এখন আমরা বইবাহিক সম্পর্কে যুক্ত। বই মানুষকে মেলায় বইকি। তিনি থাকতে থাকতেই এলেন eবং-এর অভীক সরকার। ভদ্রলোক নিজে বই কিনে ডেলিভারি দিতে চলেছেন কারও বাড়ি। সাব্বাশ বাঙালি! এমন উদ্যোগী মানুষ দেখলে শ্রদ্ধা জাগে। মিতভাষ এই ভদ্রলোকের সঙ্গে ফোনে কথা হয়েছে কয়েকবার, আজ সামনাসামনি পরিচয় হয়ে দারুণ লাগল। আমরা সেলফি তুললাম।
প্রশান্তদা গল্প-টল্প করে যাওয়ার পর বিশ্বজিতকে নিয়ে চললাম দিলখুশা কেবিন। ভেজ ফ্রায়েড রাইস আর চিলি চিকেন। বিশ্বজিতের বিয়ের ট্রিট। ফেরার পথে পাঠকে শংকরদার সঙ্গে দেখা করে এলাম। তারপর আবার সেই প্যাকেটিং ইত্যাদি। এক তরুণী এলেন ফেলুদা কিনতে, পেয়ে সে কী আনন্দ তাঁর। আমি বাস্তবিকই হেসে ফেললাম। একটা বই বইমেলার শেষদিন না পেয়ে অ্যাদ্দিন কলেজ স্ট্রিট ঢুঁড়ে উনি এসেছেন প্রকাশকের ঘরে। হ্যাঁ গা, কে বলে বাঙালি বই পড়ে না! ক্যাশ ছিল না। সঙ্গীর পকেট, নিজের পার্স চেঁছেপুঁছে টাকা মেটালেন। কিশোরদার আসার কথা ছিল। আসার কথা ছিল তিষ্য আর উন্মেষের। অপেক্ষায় ছিলাম। শেষতক কিশোরদা এলেন। থাকলেন অনেকক্ষণ। তিনি থাকতে থাকতেই এল তিষ্যরা। তারপর অভীক দত্তের পাঠক-পাঠিকা কিছু। তারা হাহা-হিহি করেই চলেছে। উপভোগ করছিলাম। এমন কথায় কথায় বন্ধুদের সঙ্গে বহুদিন হাসা হয়নি।
মোট কথা, পেন্ডিং সব অর্ডার প্যাকেটে পোরা হল। কিছু আজ গেল। কিছু সোমবার যাবে। মাথাব্যথা কমল অনেক। আশ্চর্য হলাম এই দেখে, ওই একরত্তি দোকানে মূল রাস্তার অত ভেতরেও লোকজন আসছে দেখে। নাহ, এখনও মানুষ বই ভালোবাসে। ভালোবাসেই তো, নাহলে নিজের সবটুকু অর্থ আর সময়ের সঞ্চয় ব্যয় করে প্রকাশনা চালানোর কোনও কারণ থাকত না।
বেঁচে থাকুক সৃষ্টিসুখ। বেঁচে থাকুক বাংলা বই।
ওমনিস্কোপ
Homepage of Rohon Kuddus
Leave a Reply