ইলিয়াসের জীবন বিষয়ক (নির্বাচিত অংশ)

ইলিয়াস আমার জীবনে প্রথম আবির্ভূত হয় নয়ের দশকে। পাশের বাড়ির পাঁচিলে শুয়ে-বসে রোদ পোহাত সে। ডাকলে সাড়া দিত না প্রথম প্রথম। পরে আমার ভাই বাপাইয়ের সঙ্গে কীভাবে তার ভাব হয় যেন। মাঝে মাঝে এসে একসঙ্গে বিস্কুট খেত। বাপাই তখন সবে হাঁটতে শিখেছে, সব বিষয়েই তার অপার কৌতূহল। বাইরের পৃথিবী সম্পর্কে সে নানা প্রশ্ন করত। ইলিয়াসের তরফে হুঁ-হাঁ ছাড়া বিশেষ কিছু শোনা যেত না। খাওয়া-দাওয়াতেই তার উৎসাহ সীমাবদ্ধ ছিল। একদিন ওই খাওয়ার সময়ই বিপত্তি ঘটল। বিস্কুটের টুকরোর পাশেই পড়ে থাকা একটা মার্বেলকে লজেন্স ভেবে মুখে পুরে দেয় ইলিয়াস। গলায় সেই মার্বেল আটকে মিনিটখানেকের মধ্যে মারা যায় সে। খিড়কির পুকুরের পাড়ে তাকে কবর দেওয়া হয়। সপ্তাখানেক পরে দেখা যায়, কারা যেন কবর খুঁড়ে ইলিয়াসের গলা-পচা মৃতদেহ বের করে রেখে গেছে পুকুরঘাটের পাশেই। প্রাথমিক ধাক্কা কাটিয়ে কবরখননকারীদের বাপ-বাপান্ত করতে করতে ইলিয়াসকে দ্বিতীয় বার কবর দেওয়া হয়। আরও কিছুদিন পরে জানা যায়, যে সবুজ মার্বেলটিতে ইলিয়াসের জীবনাবসান হয়, সেটি নাকি আসলে দুর্মূল্য পান্না। ব্যাপারটা যাচাই করার উপায় ছিল না, কারণ মার্বেলের মালিক বাপাই তখনও বাংলায় কথা বলতে পারত না। সম্ভবত পান্নার ব্যাপারটা নেহাতই রটনা, তবু ইলিয়াসের শ্বাসরুদ্ধকর মৃত্যুতে আমরা তৃতীয়বার মুষড়ে পড়লাম।

যদিও সে অর্থে ইলিয়াস আমাদের পোষ্য ছিল না, তবু বাড়িতে প্রথম একটা বিড়ালের মৃত্যু হয়েছে। অনেকে অনেক ভয় দেখাল। পাড়ার মসজিদের মৌলবী সাহেব বলে গেলেন, মরার পর কুড়ি দিন বিড়ালের রূহ নাকি বাড়ির আশেপাশে ঘোরাফেরা করে। বাপি যথারীতি সবই চুপচাপ শুনল। তারপর বাপাইয়ের নিঃসঙ্গতা কাটাতে বাড়ি নিয়ে এল একটা ঢাউস এ্যাকোয়ারিয়াম। তাতে কমলা-সাদা, হলুদ-নীল মাছ সাঁতরাতে লাগল। পাড়ার ছোটরা মাঝে মাঝে এসে দেখে যেত। একদিন তাদেরই পায়ে পায়ে মাছ দেখতে এল ইলিয়াস দ্য সেকেন্ড। ইলিয়াসের স্মৃতি উসকে দিলেও বাড়ির কেউ তাকে কিছু বলল না। ফলে তার যাতায়াত নিয়মিত হয়ে উঠল। সাক্ষ্যপ্রমাণ মোতাবেক সে নাকি এ্যাকোয়ারিয়ামের মেঝেতে দাঁড়িয়ে থাকা ছোট ডুবুরির সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করত। অচিরেই সবার ধারণা ভুল প্রমাণিত হল। এক সন্ধেবেলা আমরা অঞ্জন চৌধুরীর নবাব দেখতে গিয়েছিলাম। ঘণ্টা চারেক পরে ফিরে দেখা গেল, এ্যাকোয়ারিয়ামের জলে লম্বালম্বি ভাসছে বিড়ালটি। হলুদ-নীল যে মাছটার জন্যে সে ঝাঁপ দিয়েছিল, সে আস্তে আস্তে ঠোকর দিচ্ছিল ইলিয়াস দ্য সেকেন্ডের বিস্ফারিত চোখে।

0
1 Comment
  • Debiprasad
    May 6, 2017

    প্রায় ভুতুড়ে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *