আমার মহানবী

আমরা কেউ ধর্মে বিশ্বাস করি, কেউ হয়তো ধর্মকে পরিত্যাগ করিনি, কিন্তু ধর্ম নিয়ে মাথাও ঘামাই না, কেউ কট্টর নাস্তিক আবার কেউ বা ধর্মনিরপেক্ষ – কিন্তু একটা জায়গায় আমাদের গভীর মিল আছে, আমরা সবাই বাকস্বাধীনতায় প্রবলভাবে বিশ্বাসী। আর সেই জন্যই রাজীব হায়দার, অভিজিৎ রায়, ওয়াশিকুর রহমান, অনন্ত বিজয় দাস, নীলাদ্রি চট্টোপাধ্যায়রা যে কথাগুলো বলতে চেয়ে প্রাণ হারালেন, সে কথাগুলো যাতে হারিয়ে না যায় তার জন্য আমরা আপ্রাণ চেষ্টা করে যাব। ওঁদের সঙ্গে আমাদের মতাদর্শের মিল আছে কি নেই সেটা এই মুহূর্তে অবান্তর প্রশ্ন।  কিন্তু মতপ্রকাশের স্বাধীনতার সমর্থনে সারা বিশ্ব জুড়ে একাধিক ব্লগার কিবোর্ড নিয়ে বসেছেন, সেই লেখাগুলো সঙ্কলিত করে দেওয়া হল পাঠকদের জন্য – তালিকাটি দেখা যাবে এই ব্লগপোস্টের শেষে।

 

আমি যখন ক্লাস থ্রি বা ফোরে পড়ি, তখন জন্মদিনে আমায় কেউ একটা বই উপহার দেন – আব্দুল আজীজ আল আমানের লেখা ‘ছোটদের মহানবী’। ছোটদের মত করে লেখা হজরত মহম্মদ (সঃ)-এর জীবনীধর্মী একটা বই। বইটা পড়ার আগে আমার ধারণাই ছিল না মহানবী আসলে কে, কেউ আমায় এর আগে বলেও দেননি। কিন্তু লেখক বইটা এতটাই দরদ দিয়ে মায়াবী ভাষায় লিখেছিলেন, আমি প্রথমবার পড়ার পর প্রায়ই বইটার নানা অংশ প্রায়ই ঘুরিয়ে ফিরিয়ে পড়তাম।

তৎকালীন আরবে কোরায়েশ বংশের এক শিশুর জন্ম, বেড়ে ওঠা এবং প্রৌঢ়ত্বে উপনীত হয়ে তাঁর নবুয়ত প্রাপ্তির ঘটনা এত সহজে আর কেউ কোনওদিনও বুঝিয়ে বলতে পারবেন বলে মনে হয় না। নবী হিসাবে আত্মপ্রকাশের আগেই কৈশোর-যৌবনে সেই মানুষটির সততা, নিয়মনিষ্ঠা এবং সারল্য সবার কাছে তাঁকে শ্রদ্ধার পাত্র করে তুলেছিল। সত্যভাষণের জন্যে তাঁকে বলা হত ‘আল আমিন’। চল্লিশ বছর বয়সে পৌঁছে নবী হিসাবে তাঁর একেশ্বরবাদ প্রচারের সঙ্গে সঙ্গেই শুরু হল পৌত্তলিক ধর্মালম্বীদের সঙ্গে সংঘাত। অত্যাচার শুরু হল তাঁর ওপর। বাদ গেলেন না তাঁর অনুগামীরাও। প্রাণ বাঁচাতে এক সময় জন্মভূমি মক্কা ছেড়ে তিনি পাড়ি দিলেন মদীনার পথে। মদীনার মুসলমানরা এরপর মক্কার কোরায়েশদের সঙ্গে প্রাণরক্ষার তাগিদে একাধিক লড়াইয়ে জড়িয়েছেন। রক্ত ঝরেছে দুপক্ষেই। কিন্তু এক সময় তাঁরই জয় হল। বিজয়ী হজরত মহম্মদ (সঃ) ফিরে এলেন মক্কায়।

এবং আমার কাছে বইটির সবথেকে আকর্ষণীয় জায়গা কিন্তু এটাই ছিল। যারা তাঁর ওপর এক সময় অকথ্য অত্যাচার চালিয়েছিল, যুদ্ধক্ষেত্রে তঞ্চকতার আশ্রয় নিয়ে অন্যায়ভাবে হত্যা করেছিল তাঁর একাধিক অন্তরঙ্গ বন্ধুকে – তাঁদের সবাইকে তিনি ক্ষমা করে দিলেন। এমনকী কিছু মানুষ নিজেদের ক্ষমার অযোগ্য ভেবে লুকিয়ে ছিলেন, তাঁদের তিনি বুকে টেনে নিলেন। নিজের জীবনকে দৃষ্টান্ত হিসাবে সামনে রেখে তিনি ইসলামকে শান্তির ধর্ম হিসাবেই প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন।

বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আমি তাঁর জীবনীর নানা পাঠ, নানা বিশ্লেষণ পড়েছি, অনেক সমালোচনা দেখেছি, বিরূপ মন্তব্য শুনেছি। কিন্তু আমার কাছে হজরত মহম্মদ (সঃ) মানুষ হিসাবে আব্দুল আজীজ আল আমানের বর্ণনার সেই মহানবী, যিনি নির্বিচারে সমস্ত শত্রুকে ক্ষমা করে দেন। যাঁর কাছে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানই ইসলামের মূলকথা।

 

ব্যক্তিগতভাবে আমার অন্তত মনে হয় না, তাঁকে কোনও কার্টুন চরিত্র হিসাবে আঁকলে বা তাঁকে ব্যঙ্গ-মজা করে কোনও ছড়া-কবিতা-গল্প লিখলে হজরত মহম্মদ (সঃ) নিজে বিচলিত হতেন। তাঁর জীবনচর্যা অন্তত সেই কথাই বলে। কিন্তু যারা ইসলাম ধর্মের স্বঘোষিত অভিভাবক, সমস্যা তাদের নিয়েই। তাদের বিশ্বাস নিয়ে না-পসন্দ যে কোনও মতই যদি অস্ত্রের আঘাতে উড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়; তাহলে সবথেকে বেশি অসম্মান করা হয় সেই মানুষটাকে, যিনি সারাজীবন মানুষকে ক্ষমা আর শান্তির কথা শুনিয়ে এসেছেন। যে মানুষটা নিজের চারিত্রিক দৃঢ়তায় তাঁর তৎকালীন শত্রুদের থেকেও সম্মান আদায় করে নিয়েছিলেন, তাঁর স্মৃতির প্রতি এর থেকে বড় অবিচার আর হয় না। ধর্মরক্ষার জন্যে কথায় কথায় খঞ্জর নিয়ে ঝাঁপিয়ে না পড়ে, আপামর মুসলমান জনগোষ্ঠীর মধ্যে শিক্ষাবিস্তারের চেষ্টাটাই বোধ হয় হজরত মহম্মদ (সঃ)-এর প্রতি সবথেকে বড় শ্রদ্ধার্ঘ্য হতে পারত। আশা করি তাঁর সেই বিখ্যাত উক্তিটি (বিদ্যার্জনের জন্যে যদি সুদূর চিনেও যেতে হয়, যাও।) ধর্মনির্বিশেষে মানুষ মনে রেখেছেন।

আমি জানি, যারা ব্লগার খুন করে, তারা কোনওদিনই আমার এ ব্লগ পোস্ট পড়বে না। এও জানি, যারা এই খুনিদের হাতে অস্ত্র তুলে দেয়, তারা আমার এই পোস্ট পড়েও নিজেদের স্বার্থের ওপরে মানবিকতাকে স্থান দেবে না। কিন্তু যে সরল বিশ্বাসে আমি ‘ছোটদের মহানবী’ এখনও ধারণ করে আছি; সেই তীব্র বিশ্বাসেই জানি, যে কোনও অত্যাচারীই যেমন দ্রুতগতিতে নিজের ধ্বংসের দিকে এগিয়ে যায়, এদের জন্যেও একই পরিণাম অপেক্ষা করে আছে।

 

আসুন নজরুলের সেই কবিতাটা আরও একবার পড়ি।

 

তোমার বাণীরে করিনি গ্রহণ

ক্ষমা করো হজরত।

ভুলিয়া গিয়াছি তব আদর্শ, তোমার দেখানো পথ

ক্ষমা করো হজরত।

 

বিলাস বিভব দলিয়াছ পায় ধুলিসম তুমি প্রভু

তুমি চাহ নাই আমরা হইব বাদশা নওয়াব কভু।

এই ধরণীর ধন সম্ভার, সকলের তাহে সম অধিকার।

তুমি বলেছিলে, ধরণীতে সবে সমান পুত্রবত।

ক্ষমা করো হজরত।

 

তোমার ধর্মে অবিশ্বাসীরে তুমি ঘৃণা নাহি করে

আপনি তাদের করিয়াছ সেবা ঠাঁই দিয়ে নিজ ঘরে।

ভিন্-ধর্মীর পূজা মন্দির, ভাঙতে আদেশ দাওনি, হে বীর,

আমরা আজিকে সহ্য করিতে পারিনাকো পর-মত।

ক্ষমা করো হজরত।

 

তুমি চাহ নাই ধর্মের নামে গ্লানিকর হানাহানি,

তলোয়ার তুমি দাও নাই হাতে, দিয়াছ অমর বানী,

মোরা ভুলে গিয়ে তব উদারতা, সার করিয়াছি ধর্মান্ধতা,

বেহেশত হতে ঝরে নাকো আর তাই তব রহমত।

ক্ষমা করো হজরত।

 

 

অন্য ব্লগারদের পোস্টগুলি

অভিষেক মুখার্জ্জী  – আইডিয়া 

Kausik Datta – Plight of secular bloggers in Bangladesh

তন্ময় মুখার্জ্জী – ধর্ম, ব্লগ আর একঘেয়ে খুন-টুন

তপোব্রত ব্যানার্জ্জী – আহত কলম

প্রবীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায় — ঊনচল্লিশের এক এবং অন্যান্য

0
3 Comments
  • cinthia nazneen
    August 9, 2015

    Opurbo rohon. Pore bakruddho.ottonto somoyopojogi, guruttopurno totthobahi ekti post.plz share in fb also.

    • rohonkuddus@gmail.com
      August 9, 2015

      ফেসবুকেও শেয়ার করেছি।

  • কৌষিক ভাদুড়ী
    August 9, 2015

    আমাদের প্রিয় রোহন কুদ্দুসের কাছ থেকে এমনই একটা প্রসঙ্গ উত্থাপনের প্রতীক্ষায় ছিলাম। আসলে জীবনের প্রয়োজনেই ধর্ম আসে, অতিজৈবিক প্রয়োজনে নয়। তবে সে কারণ ‘বৌদ্ধিক’; সেখানে ধর্মের সৃষ্টির কোন মেটিরিয়ালিস্টিক কারণ খুঁজতে যাওয়া অর্থহীন। অর্থহীন কথাটা এই কারণে বললাম ; দীর্ঘ সময় ধরে কোন সমাজে একটা ধর্ম টিকে থাকে তখনই যখন মানুষ তার ‘ভাব-বুদ্ধিগত ভাল থাকা’র প্রয়োজনীয় উপকরণটি ধর্মের কাছে পায়। না হলে সে ধর্ম টিকে থাকতে পারে না। সেই কারণেই ধর্মের মূল রূপটির থেকে; একটা স্টেবল সমাজে সেটির টিকে থাকাটাই; আমার কাছে অর্থবহ ও সম্মানীয়। ধর্মের সেই ছবিটাই এই লেখা থেকে পাই। মানুষের কাছে ধর্মের প্রয়োজন ও মানে; এই বিষয়ে আমি নিজের পর্যবেক্ষণ থেকে যা পেয়েছি আমার স্বল্প কিছু লেখার মধ্যে তা উঠে এসেছে।
    ১। যেমন ঐহিক পত্রিকার বোধ সংখ্যায় “কলসখালির অবোধভাষ্য”এ –
    “–নাঃ সে সব কিচ্ছু বলছি না। সে ব্যাপারে আমি নাইভ হব না; ওরহ্যান পামুকের অবস্থান নেব। বিল ক্লিন্টনের (গুরু লোকটা রসিক বটে! কী গ্ল্যামার; কেষ্ট ঠাকুর কোথায় লাগে! ওর আগুনে স্বেচ্ছাহুতি দিত কতকত মনিকা সেলিস!) মতো বলব revealing continuously. অনন্ত কাল, অসীম দেশ, এই তো গেল চারটে মাত্রা, মাত্রাও তো চার কিংবা নোলানের মতো পাঁচ নয়, আইনস্টাইন বলেছিলেন অসংখ্য মানে অসীম সংখ্যক। তাই এই যে সৃষ্টি তার কর্তাকে আমি জানবার কে? যেহেতু জানব না, সেহেতু আছে কী নেই এই প্রশ্নের কী মানে? আমি চলি আভাসে আমি চলি যাপনের ইঙ্গিতে প্রেমে ও অপ্রেমে। অপ্রেম কেন? কারা যেন স্রষ্টার ত্রিমূর্তির কথা বলে…ব্রহ্মা বিষ্ণু মহেশ্বর…সৃজন পালন সংহার? কারা যেন ধার্মিক কত্‌লএর কথা বলে, কারা যেন শাস্তির বিধান দেয়ে? তা হলে? একটা অস্তিত্বের জন্য আর এক অস্তিত্বের বিনাশ এ তো প্রকৃতিরই। সৃষ্টিকর্তা; আছেন বা নেই; এটা অখণ্ড প্রকৃতিরই দেওয়া পাজল। ছানার মুখে খাবার জোগাতে বাঘিনিকে মারতে হয় হরিণ ছানাই। অপ্রেম শব্দ অসঙ্গত; বলুন?
    আমার ঈশ্বর বোধ একটা একটা করে তরঙ্গের প্রাপ্তি ও পাঠোদ্ধার। সে যাই হোক যাঁরা বিশ্বাসী তাঁরা আমার শ্রদ্ধার লোক। কেন জানেন? ঐহিক ভৌতিক আত্মিক তিন মহলা কানামাছি ঘুরে কেউ যদি ঈশ্বর আছেন সমগ্র সৃষ্টির ব্যাকড্রপে এক কর্তা আছেন বিশ্বাস করে স্বচ্ছন্দ হন। তা হোন না। ক্ষতি কী? বিজ্ঞানও তো অনেক আজগুবি ‘আছে’ ধরে সাময়িক সমাধানে আসে; যেমন এনট্রপি, যেমন সিঙ্গুলারিটি। ধর এক পিতা টার্মিনাল ডিসিসে ভোগা সন্তানের মুখ সর্ব শক্তিমানের কল্পিত অবয়বের কল্পিত কোলে কল্পনা করে কিছুটা ক্লেশ দূরে রাখেন, আমাদের তাতে বিরোধের কারণ নেই। শরীরের ব্যথা দূর করতেও আমরা তো পেন কিলার নিই। এ অবস্থান সেই অবস্থান যেখানে বিজ্ঞানের কোন নিরাময় নেই। পেন কিলার কী ভাবে কাজ করে? -যে সব রাসায়নিক স্বাভাবিক শরীরী প্রক্রিয়ায় মস্তিস্কে ক্ষরিত হয়ে ব্যথা বোধ কমায়; তাদেরই মাত্রার হেরফের ঘটিয়ে। হ্যালুসিনেশন তৈরী করে। এ ক্ষেত্রে ঈশ্বর হিলার না হলেও পেন কিলার। এবং কোনো বাইরের অনুপ্রবেশ না ঘটিয়েই। এই বিশ্বাসে অন্য মানুষের আপত্তির কারণ না থাকাই সঙ্গত। যাপন উদ্ভূত এমন বহু ক্লেশকে আমরা আমাদের ব্যক্তিগত স্তরে সর্বময়ের ইচ্ছায়ে ধরে নিয়ে সাময়িক দূরে রাখতে পারি। শরীরের থেকে আলাদা ব্যক্তির বোধের উত্স; আমার ‘আমি’ সেখানে; ধরে নিয়ে নিজেদের অনন্ত অস্তিত্ব কল্পনা করে নিতে পারি, যাপনের প্রয়োজনে যে কাজ করতে একান্ত অনীহা অথচ করতে বাধ্য সেইখান থেকে তৈরি হওয়া শারীরিক ক্লেদ মানসিক অবসাদ কম রাখতে পারি। এই ভাবে সৃষ্টি হন ব্যক্তিগত ঈশ্বর; ব্যক্তি স্তরে। তবে সেই ঈশ্বরের উদ্দেশ্যে আলাদা ভাবে কিছু করার দায় এখান থেকে আসে না। এই ‘আলাদা ভাবে কিছু করা’টাই ধর্মাচরণ। তার জন্য বিধি, বিধির উল্লঙ্ঘন, দণ্ড। প্যান্ডোরা বক্সে বন্দী সে এক বিশাল হাতি। ধর্ম এইটাই। কী ভাবে সৃষ্টি হয় যেন? ধর ১) সর্বশক্তিমান আছেন এইটা মেনে নিলাম– এই হলো monotheism। ২) আস্তিক্য কল্পনা আবার বহুবিধ হতে পারে। যেমন অর্থকষ্ট… সংশ্লিষ্ট সর্বশক্তিমানা লক্ষ্মী; শরণ নাও! স্মল পক্স তো মা শীতলার! ইত্যাদি। এই হলো polytheism। যেটাই হোক; ধর কিছু মানুষ ঈশ্বরকে একই রকম ভাবে কল্পনা করি– পরম স্নেহময় পিতার বা মমতাময়ী মাতার এই রূপ বা ওই রূপ অথবা বহুরূপে– অর্থাৎ লাইক মাইন্ডেড স্পিরিচুয়ালিটি- সেখান থেকে সঙ্ঘ তৈরী হয়! দাঁড়াও এখনও ধর্মে আসিনি! এবার এই বহুধা বিভক্ত সঙ্ঘের ভেতর থেকে কেউ কেউ আস্থাভাজন উঠে আসেন একই সময়ে বা বিভিন্ন সময়ে। তাঁরা অভিভাবন দেন–ওরে শুধু চাইলে হয় তাঁর জন্যে করবিনে কিছুই! সেইখান থেকে সৃষ্টি হয় আচরণ বিধি যা একান্তই সঙ্ঘ ভিত্তিক, য়া নেহি কি ধরম্‌! এইবারে যদি কোনো সঙ্ঘে পরিস্কার লিপিবদ্ধ হলো কি ভাবে খাবে, কোনটা খাবে, কোনটা পরবে, কি ভাবে পটি-সুসু করবে, ইত্যাদি ব্যবহারিক আচরণ বিধি; উভয়ত সমাজ ও ব্যক্তি স্তরে; তা হলেই ঘজব! সৃষ্টি হয়ে গেল ধর্মের মৌলিকতা। মৌলবাদের আঁতুড় ঘর। বিধি পালনের মনসবদার, ইনাম তোলা অদৃশ্যলোকে। বিধি ভঙ্গের পাহারাদার, দৃশ্যলোকে দণ্ড প্রদান। মানুষের জন্য ঈশ্বর থেকে সরে এসে ঈশ্বরের জন্য মানুষ!
    হ্যাঁ! ‘আমি যে বেসেছি ভালো এ পূজারী ব্রাহ্মণে’ বা ‘মোলা’রে হলে অসুবিধে ছিল না; কিন্তু এর সাথে কার্য কারণ সম্পর্ক রেখে যা যা হতে পারে হয় তাতে কারো সুবিধে কারো অসুবিধে! আমি অবিশ্যি আয়াম; মানে ফ্রেম, অ্যাবসলিউট প্যাসিভ, যতক্ষণ চোখ থাকে শুধু দেখি, আর নিজের সাপেক্ষে যাচ করি; তাই আমারও কোন অসুবিধে নেই।
    জানি বিতর্কের মেঘে ঢেকেছি উড়াল! অনেকেই বলবেন- ‘কার্য কারণ সম্পর্ক’ বলতে? হে ডিউড ওয়া ড্যুউ মিন? স্যার ভাবুন তো হেঃ হেঃ, যদিও সবাই জানে লাইক পোলস রিপালস তবুও ঘোট পাকাতে লাইকমাইন্ডেড পিপলস লাগে! সেই ঘোট অচিরেই ধর্মাচরণের নিমিত্তে পরিবেশ পারিপার্শ্ব চায়, হয় হিন্দু এলাকা, মুসলিম এলাকা। পরে পরে যত অধিক ধর্মাচার তত চাই প্রসার; চাই দেশ। ধর্মের আধার; সৃষ্টিকর্তা বা ঈশ্বর যাই বলুন; তার থেকে কখন সরে গিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে যাপন প্রক্রিয়ায়; তার প্রয়োজন আরও আরও প্রাচুর্য; … ভূমৌ সুখম! সুতরাং দাঁড়াচ্ছে ‘যে যারে বেসেছ ভালো রাখ তারে যতনে’।
    তুলতে পারেন নিরীহ ধর্মাচরণের কথা; এই যেমন সর্বং সহা যত মথ তত পথ! আরে তাদের জাগতিক যোগান কে দেয়? এই ধরুন মাথা ফাটিয়ে মারতে মাগুর মাছ? শ্মশান কালীর মূর্তিওলা কশাইএর দোকান? বলির মোষ (না হয় বেলুর মঠে রদ্দ আছে পশুপতি মন্দিরে তো নেই!) হাঁড়িকাঠে ভরতে লস্কর? সব তো এলিট ক্লাশ! এমন কি ইউরোপ অ্যামেরিকায় র্যা শনালিস্ট জবাই, ক্যাপটিভ বোল্ট গান দিয়ে সরাসরি মাথায় গুলি করে ব্রেনডেথ করলেও, মুহূর্তের মধ্যে গ্রেম্যাটার ছড়িয়ে যায় আর্টারি ভেন দিয়ে সারা দেহে। ভাবা হয় ম্যাড কাউ রোগের এটাই কারণ। তুলনায় ইসলামে যে জব করার বিধি আছে সেটা ফলো করা গরীবগুর্বোদের পক্ষে অনেক সহজ। কোনটা সরল পথ? ঈশ্বরের উপাসনা এখানে উদযাপন থেকে যাপনের স্তরে, সমাজকে ধরে রাখতে, ভাবুন!”

    ২। যেমন ‘পদ্যের আঁতুড় ঘর’এ –
    “বিশ্বের এই সর্ববৃহৎ বিশ্বাসী সমাজ ব্যবস্থার অন্তর্সংঘাত আমাকে পীড়া দেয়ে। তাঁদের দোলাচল তাঁদের বহিরাচরণে এক কিম্ভূতাকার বৈপরীত্য হয়ে ফুটে ওঠে পৃথিবী জুড়ে। এমনিতে এত সুশৃঙ্খল আচরণ সম্পন্ন সরল বিশ্বাসী সেই সব মানুষদের যখন দেখি বেঁচে থাকার আবশ্যকীয় সিদ্ধ্বান্তগুলি গ্রহণের অথবা বর্জনের দ্বিধা, দৃঢ় নয় কোনও সিদ্ধ্বান্ত, আমার কষ্ট হয়।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *