ইয়াকুব এবং লিফট সংক্রান্ত একটি গল্প

গতকাল ইয়াকুবের মেল পেলাম। ইনবক্সে নামটা দেখেই আশ্চর্য হয়েছিলাম। প্রাগে থাকাকালীন অল্প কয়েকজন মানুষের সাথে আমার বরাবরের শত্রুতা তৈরি হয়েছিল। তার মধ্যে এই ইয়াকুব একজন।

প্রাগের যে ব্যাঙ্ক আমাদের ক্লায়েন্ট ছিল, ইয়াকুব সেই ব্যাঙ্কে চাকরি করত। প্রাগে আমরা একই অফিসে কাজ করতাম। বিভিন্ন মিটিং-এ তার সঙ্গে যতবার মোলাকাত হয়েছে, সবসময়ই কোনও না কোনওভাবে তার টোন-টিটকিরির সামনে পড়তে হয়েছে আমায়।
আমি সাদা বোর্ডে কোনও একটা সলিউশান বোঝাচ্ছি, ইয়াকুব আচমকা বলে উঠল – “তোমার হাতের লেখা তো চমৎকার।” বলাই বাহুল্য, গত আট বছর ধরে কিবোর্ড পিষে পিষে আমার হাতের লেখা দেখলে ডাক্তাররাও লজ্জা পাবেন।

তারপর ধরা যাক, কোনও মিটিং-এর শুরুতে ইয়াকুব হঠাৎ সবাইকে লজেন্স দিতে শুরু করল। লজেন্স-এ আমার এমনই প্রগাঢ় ভক্তি যে, ইয়াকুব দিলেও আমি নিতে রাজি। আমার দিকে বাক্সটা ঘোরাতেই আমি হাত বাড়ালাম। ইয়াকুব নিষ্ঠুর হেসে সেটা নিজের দিকে টেনে নিল – “তোমার মা শেখাননি অচেনা মানুষজনের থেকে লজেন্স না নিতে?” এমন রসিকতায় আমি কাষ্ঠ হেসে ল্যাপটপ স্ক্রিনে মুখ ঘোরালাম। ইয়াকুব একটা লজেন্স ছুঁড়ে দিল টেবিলের ওপার থেকে – “আমি মজা করছিলাম।”

ইয়াকুব আমারই বয়সী হবে। কিন্তু পদমর্যাদার সিঁড়িতে তুলনামূলকভাবে সে আমার থেকে দু-এক ধাপ নিচে কাজ করত তখন। তাই আমায় কোনও ইমেল পাঠাতে গেলেও তাকে সবসময়ই নিজের বসকে সিসি-তে রাখতেই হত। এই নিয়েও তার কিছুটা ক্ষোভ ছিল বোধ হয়। আমায় একদিন সরাসরি সে জিজ্ঞাসা করে বসল – “তুমি এই বয়সেই টিম লিড হলে কী করে? তোমার কাজকর্ম দেখে তো তোমায় এমন কিছু জিনিয়াস মনে হয় না।” খোঁচাটা এড়িয়ে গিয়ে আমি সহজভাবে উত্তর দিলাম – “ভারতে ইউরোপের তুলনায় কম বয়সেই প্রোমোশান হয়ে যায়। আমাদের দেশে আমার বয়সেই লোকে টিমলিড হয়। জিনিয়াস কিনা জানি না, তবে সেখানে গড়পড়তা সবাই আমার মতই।” আমার এই উত্তরে ইয়াকুবের ছদ্ম-বিস্ময় – “একটা পুরো দেশে তোমার মত লোকজন ঠাসা! আমার আগেই বোঝা উচিত ছিল ভারত এখনও কেন তৃতীয় বিশ্বের দেশ।”

এক কথায়, ইয়াকুবকে আমি পছন্দ করতাম না। আরও সহজ ভাষায়, পৃথিবীর যে কজন লোকের প্যান্টে আমি একসঙ্গে এক ডজন কাঠপিঁপড়ে ছেড়ে দেওয়ার তালিকা বানিয়েছি, তাদের মধ্যে ইয়াকুবের স্থান ছিল দ্বিতীয়।
যাই হোক, এমনটাই চলছিল। ইয়াকুব আমায় সুযোগ পেলেই সকলের সামনে অপদস্থ করে। আর আমি মহত্ত্ব দেখানোর নাম করে সেগুলো এড়িয়ে যাই। আমার সহকর্মীদের কেউ কেউ ব্যাপারটা জানতে পেরে আমার সাহায্যে এগিয়ে এসেছিল। একজন বোর্ডে এঁকে দেখিয়েওছিল ঠিক কোন এ্যাঙ্গেলে ঘুষিটা মারলে ইয়াকুবের দাঁত পড়বে না, মুখে কোনও দাগও থাকবে না, কিন্তু পুরো এক সপ্তা ব্যথা থাকবে।

কিন্তু ওপরওয়ালা মেহেরবান। আমায় ঘুষিটা হাতে মারতে হয়নি।

 

এক সোমবার সকালে লিফটের সামনে দাঁড়িয়ে আছি। আমার চারপাশে আরও কয়েকজন ব্যাঙ্কে

0
8 Comments
  • Tapo
    June 12, 2014

    Chomotokar Lekha. Bhalo laglo… ar aje baje client to sobaikei face korte hoe… tai jaegae jaegae chenao laglo! 🙂

  • Sanhita
    June 13, 2014

    😀 সফোবাচ। আরও একবার।

  • Tamim Tanveer
    June 20, 2014

    Tumi eta alumni te bolechile ebaar…..tobe in a nutshell

  • rohonkuddus@gmail.com
    June 20, 2014

    তামিম, আমি শুধু প্রথম অংশটা বলেছিলাম। পুরোটা তখনও ঘটেনি। 🙂

  • Shibaji Sanyal
    July 9, 2014

    Chomotokar….. eami tai “manus chena dai” , client chena money hoy aro boro dai …., sodik thake 🙂

    • rohonkuddus@gmail.com
      July 9, 2014

      ক্লায়েন্টগুলো সাধারণত এক রকমই হয়, দু-একটা বোধ হয় ব্যতিক্রমী। 🙂

  • sahabaj alam
    October 21, 2014

    Ekta jinis bojha galo na mission e tumi sobta bolle na keno.

    • rohonkuddus@gmail.com
      March 29, 2015

      তখনও পুরো ঘটনাটা ঘটেনি আসলে। 🙂

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *