বাপাইবাবু, বাপনবাবু-র চিঠি

আজ হাতে এসে পড়ল একটা পত্রিকার খাম। যে বন্ধু পাঠিয়েছেন, তিনি ভুল করে ঠিকানার একটা লাইন বাদ দিয়েছিলেন। ফলে ব্যাপারটা দাঁড়িয়েছে রোহণ কুদ্দুস, ইলেকট্রনিক সিটি, ব্যাঙ্গালোর। ভাগ্যিস নিচে ফোন নাম্বার ছিল। তাই ডিটিডিসি-র লোকজন সারা ইলেকট্রনিক সিটি খুঁজে শেষ পর্যন্ত দিয়ে গেল খামটা।

এই খামটা হাতে নিয়ে মনে পড়ে গেল প্রায় কুড়ি বছর আগের একটা ঘটনা। তখনও নানা উপলক্ষে গ্রিটিংস কার্ড পাঠানোর রীতি ছিল। ঈদে রাঙাকাকু বন্ধুদের পাঠানোর জন্যে বেশ কিছু গ্রিটিংস কার্ড ছাপিয়েছিল। জলপাই পাতা ঠোঁটে শান্তির প্রতীক একটা সাদা পায়রা উড়ে যাচ্ছে। নিচে নীল-সবুজ পৃথিবী। তার নিচে লেখা সৌভ্রাতৃত্ব ও সম্প্রীতির উৎসব ঈদ-উল-ফিতরে আপনাকে শুভেচ্ছা জানাই। তারও নিচে রাঙাকাকুর নাম। অন্য সবাইকে এই কার্ড পাঠানোর সময় কলকাতা থেকে রাঙাকাকু আমাদের দুভাই-এর জন্যেও একটা কার্ড পোস্ট করেছিল। সাদা খামের ওপর ঠিকানা হিসাবে লাল কালিতে লেখা ছিল —
বাপনবাবু, বাপাইবাবু
হাল্যান, হাওড়া।

তখন তো ফোনের বালাই ছিল না, তাই ফোন নাম্বার তো দূরের কথা, পিন নাম্বারটাও ছিল না। কিন্তু পিওন আতাকাকু একদিন দুপুরে ঠিকই পৌঁছে দিয়ে গেল সেই কার্ড। তারপর বহুদিন সেটা খামসহ তুলে রেখেছিলাম। বাড়িতে কেউ এলে রাঙাকাকুর খামখেয়ালিপনা বা ভুলোমনের সেই নিদর্শন বের করে দেখাতাম। কেউ আমাদের ঠিকানা চাইলে বলতাম, “আমাদের ডাকনাম লিখে শুধু হাল্যান, হাওড়া লিখে দেবে।” আমি খুব বিশ্বাস করতাম, এই ঠিকানাতেই চিঠি ঠিক আসবে। কিন্তু বড়রা সবাই তো আর রাঙাকাকু নয়, তাই ভালো করে গুছিয়ে আমাদের ভালোনাম দিয়ে ঠিকানা দিতে বাধ্য করত। সেজন্যে সেই একবারই শুধু বাপনবাবু বা বাপাইবাবুর নামে চিঠি এসেছিল।

আজ ‘রোহণ কুদ্দুস, ইলেকট্রনিক সিটি, ব্যাঙ্গালোর’ দেখে ছোটবেলার সেই স্মৃতি গলার কাছে দলা পাকিয়ে এক লহমার জন্যে হলেও মনখারাপ করে দিল।

1
2 Comments
  • Ishita Bhaduri
    July 10, 2016

    Valo laglo

    • rohonkuddus@gmail.com
      July 13, 2016

      🙂

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *