লিপিবদ্ধ রোহণ

শনিবারে সকাল সকাল ফোন করে কেউ ঘুম থেকে তুললে মনে হয়, হাতের কাছে যদি পেতাম না… তো আজ এক কিশোরী ফোন করেছিল। জানাল ক্লাস নাইনে পড়ে। তা আমার সঙ্গে কী দরকার? বলল, “তোমার হারুণ চাচা বইটা পড়েছি কাল সারাদিন ধরে। একটা ডাউট ক্লিয়ার করতে ফোন করেছিলাম।” আমি জানতে চাইলাম, “বইটা কোত্থেকে পেলে? তার থেকেও বড় কথা আমার নাম্বার কোত্থেকে পেলে?” সে জানাল, তার বাবা আমার পরিচিত। বইটা কিনেছেনও বাবা-ই। সেই সূত্রে আমার নাম্বারটাও বাবার মোবাইল থেকেই পেয়েছে। যাই হোক, ডাউটটা কী? কিশোরী একটু ইতস্তত করে জানাল, “আপনার লেখাগুলো খুব উইটি। খুব আশা করেছিলাম আপনি একজন মহিলা হয়তো। ছদ্মনামে লেখেন। নাহলে রোহণ কুদ্দুস কখনও রিয়েল নেম হতে পারে কারও?” আমি এক মুহূর্তে ভেবে বললাম, “যদি কথা দাও ব্যাপারটা ফাঁস করবে না, তাহলে তোমায় আসল ব্যাপারটা বলতে পারি।” কিশোরী প্রমিস করল, কাউকে বলবে না। আমি তখন গুপ্ত কথাটা ভাঙলাম, “আসলে গল্পগুলো আমার স্ত্রীর লেখা। কিন্তু সে আমার নামে এগুলো প্রকাশ করে।” কিশোরী এবার দারুণ উৎসুক, “কেন? আপনার নামে প্রকাশ করে কেন?” আমি এবার রহস্যের শেষ পর্দাটা সরালাম, “আসলে তার নাম আরও বদখত — লালবানু। ওই নাম তো এখনকার দিনে অচল। তাই সে অপেক্ষাকৃত কম খারাপ একটা নাম ব্যবহার করে।”

ওদিকে কয়েক সেকেন্ডের নীরবতা। তারপর প্রশ্ন এল, “আপনি বানিয়ে বানিয়ে বলছেন, না?” একটু মায়া হল। তাই বললাম, “তুমি ঠিকই ধরেছ, আমি মজা করছিলাম। আসলে আমার স্ত্রীর নাম নাফিসা বেগম। কেউ কেউ তাকে লিপি বলেও ডাকে। কিন্তু গল্পগুলো তারই লেখা, এটা সত্যি কথা।” এবার কিশোরী উচ্ছ্বসিত — “আমি ঠিক ধরেছি, এগুলো কোনও মহিলারই লেখা নিশ্চয়।” তারপর আমার স্ত্রীকে ফোনে চাইল। সে আমার এখানে নেই শুনে শেষে একটা উপদেশ দিয়ে ফোন রাখল — “আপনার স্ত্রীকে বলবেন নিজের নাম ব্যবহার করতে। নাফিসা বেগম লিপি নামটা রাখলে বেশ ভালো লাগবে। নিজে গল্প লিখে আপনার নামে প্রকাশ করাটা একেবারেই ঠিক নয়। আর আপনিও তো বেশ আছেন। অন্যের লেখার ক্রেডিট নিয়ে যাচ্ছেন চুপচাপ। তার ওপর ‘এখানে নেই’ বলে ফোনটাও দিলেন না। আসলে আপনারা ছেলেরা সব একই রকম থেকে গেলেন। বুঝলেন তো?”

সেই সকাল থেকেই একা একা হেসে যাচ্ছি।

4

No Comments Yet.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *