এর আগের বার ওমানে এসে দারুণ মজা হয়েছিল। খাওয়াদাওয়া একেবারে শেহবাগ স্টাইলে হয়েছিল। মাটনের ওপরেই খেলছিলাম দু’বেলা। খুব একঘেয়ে লাগলে চিকেন। আর খাবার দাম কী সস্তা! মাটন কারি দেড় রিয়াল। শুনে কেমন দেড় টাকা টাইপ লাগে না? জানতাম এক রিয়াল মানে বোধ হয় আড়াই ডলার কী পৌনে তিন ডলার। কিন্তু ওই আর কী, মনে মনে ঘুরত ওই তো আড়াই বা পৌনে তিন। তা এবারও মনটা উড়ু উড়ু করছিল ওমানে নেমে। দুপুরবেলা মাটন-ভাত নিয়েছি। সঙ্গের ছানাটা বলে, “বাবা রে! দু রিয়াল!” আমি হেসে বলি, “তাতে কী রে! ওই তো দুই মোটে।” সে আঙুলের কর গুনে বলে, “এক রিয়াল মানে ১৭০ টাকা।” এবার আমার হাঁ হওয়ার পালা! একশ সত্তর! বলে কী রে ভাই! মানে প্রায় সাড়ে তিনশ টাকার মাটন-ভাত। তারপর আর কী বলব মশাই, রিয়াল-ডলারের বদলে রিয়াল-টাকার সম্পর্ক মাথায় গেঁথে গেল। এদিক তাকাই এক রিয়ালের আইসক্রিম, ওদিক তাকাই দেড় রিয়ালের কেক। বাপরে! একশ সত্তর, আড়াইশ — হাত দিলেই ছ্যাঁকা লাগছে যেন।
আজ রেস্তোরাঁয় গিয়ে বসেছি। বেয়ারা এসে ভালো মুখে বলল, “স্যর নর্মাল পানি দেব? নাকি ঠান্ডা পানি?” বললাম, “নর্মালই দাও।” ছোকরা দেখি অ্যাকোয়াফিনা এনে হাজির। ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞাসা করলাম, “এটা কত হে?” উত্তর এল — “তিনশ বাইসা।” এদের বাইসা মানে পয়সা আর কী! আরবিতে প নেই কিনা, তাই তার বদলে ব বলে। এই প না থাকার কারণে আরবিভাষীদের সঙ্গে কথা কইতে কত যে অত্যাচার সইতে হয়। ধরুন, আপনার নাম পুনিত। ওরা ডাকবে বুনিত, অনভ্যস্ত কানে বুনিপ-ও মনে হতে পারে। ওমানে তো তাও ঠিক আছে। মিশরে হাল আরও খারাপ। পিরামিডের দেশ, কথায় কথায় জিনিসের নাম পিরামিড দিয়ে রাখে। কায়রো গেলে যে হোটেলে উঠি, তার নাম ‘পিরামিসা’। হোটেলের চালে নিয়ন বাতি দিয়ে আরবি নাম লিখতে গিয়ে প-টা ধার করে এনেছে ফার্সির পে থেকে। যাই হোক, আসল কথায় ফিরে আসি। তিনশ বাইসা। মনে মনে হিসাব কষি, ১৭০ ধরলে ৫১ টাকা। হাফ লিটার জলের দাম ৫১ টাকা? অত দামি জল কি পেটে সইবে? জিজ্ঞাসা করলাম, “তোমাদের এখানে ট্যাপের জল খায় না, না?” সে একটু অবাক হয়ে তাকায়। একটু ভেবে বললাম, “স্প্রাইটের দামও একই, না?” সে ঘটাঘট মাথা নাড়ল। অ্যাকোয়াফিনার বদলে স্প্রাইট আনতে বললাম। ছানাটার দিকে তাকিয়ে হাসি — “৫০-৫১ যাই হোক, দাম যখন দিতেই হবে, হাফ লিটার জলের থেকে হাফ লিটার স্প্রাইটই ভালো।” পাশ থেকে সে জ্ঞান দেয়, “জলের বদলে সফট ড্রিংক খাওয়া কি ভালো?” ঠান্ডা গলায় বললাম, “আমার মাথায় এই টাকাপয়সার হিসাব তুই-ই ঢুকিয়েছিস। কোয়ার্টার শেষ হয়েছে, অ্যাপ্রেজাল শুরু হবে বলে। দেখ তোর কী করি।”
আসলে করব তো ঘেঁচু। কিন্তু ওর কারণে যেমন এখন ‘আমার মনবাগানের শখের তরুর ফল’ বাঁদরে খেয়ে যাচ্ছে, তেমন আমার এই হুমকিতে ব্যাটা দু-তিন হপ্তা অশান্তিতে কাটাক এখন।
ওমনিস্কোপ
Homepage of Rohon Kuddus
Leave a Reply